ভাষা –শব্দের
সাহায্যে ভাবের অভিব্যক্তি, এই মানেই আমরা পাই সাহিত্য সংসদ অভিধানে। ভাষার প্রধানত দু ধরনের পরিবর্তন হয়ে এসেছে এতদিন,
১) দূরত্বগত
ভাবে ও
২) সময়ের
সঙ্গে
প্রথমটি,
প্রতি ৩০ কিলোমিটার পথ চলার পর আমরা ভাষার এই পরিবর্তন লক্ষ করি, যা আজ আমাদের
আলোচ্য বিষয় নয়। দ্বিতীয়টি, যে পরিবর্তন আমরা প্রতি বছর পাই, প্রতি বছরে আমরা একটা
বা দুটো নতুন শব্দ প্রয়োগ শুরু করি, যা আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
১) ৯৯৭
বঙ্গাব্দের নিদাঘশেষে একদিন একজন অশ্বারোহী পুরুষ বিষ্ণুপুর হইতে মান্দারণের পথে
একাকী গমন করিতেছিলেন।
২) এ পৃথিবীতে এক সম্প্রদায়ের লোক আছে, তাহারা যেনখড়ের আগুন । দপ্ করিয়া জ্বলিয়াউঠিতেও পারে, আবারখপ্ করিয়া নিবিয়া যাইতেও পারে।
৩) শেষ
বিকেলটা অন্ধকারে ভরে আসছিল। দুপুরের পর থেকেই আকাশ মেঘলা, মাঝে মাঝে তরল মেঘেরা
উড়ে উড়ে যাচ্ছিল আকাশছোঁয়া বারিগুলোর মাথা মুড়িয়ে।
৪) ইমনকে
হঠাৎ দেখলে সে ছেলে কি মেয়ে বোঝবার উপায় নেই। চুল ছেলেদের মতো, সামনে বড় বড়, পেছনে
ছোট ছোট করে কাটা।
সময়ের সঙ্গে
ভাষার পরিবর্তন উপরে লেখা চারটি লাইন এ খুবই পরিষ্কার,প্রতিটি একটি উপন্যাসবা
গল্পের প্রথম লাইন। প্রথমটি বাঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
মহাশয়ের দুর্গেশনান্দিনির, দ্বিতীয়টি শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের বড়দিদির, ৩য়টি
সমরেশ মজুমদারের কালবেলা ও চতুর্থটি বাণী বসুর একুশে পা। শতাব্দি জুরে বইয়ের ভাষার
এই পরিবর্তন আমরা সাদরে গ্রহন করেছি কারন আমাদের চলতি ভাষারও এইভাবেই পরিবর্তন
ঘটেছে।
আমরা
সিনেমাতেও ভাষার এই পরিবর্তন লক্ষ করেছি, ধরা যাক আমাদের প্রবাদপ্রতিম মহানায়াক ও
মহানায়িকার জুটির কথা, এনাদের কোনও সিনেমাতে একে অপরকে প্রেম নিবেদন করতে দেখা
যায়নি কিন্তু চোখের ও শরিরি ভাষায় এই পর্বটি তারা চমৎকার ভাবে করেছেন এবং দর্শকদের
আনন্দ দিয়েছেন। ২০১২ সালের একটি বাংলা সিনেমার কথা না বললে মনে হয় সিনেমা তে প্রেম
নিবেদনে বাংলা ভাষার পরিবর্তনটা ঠিক মতন বোঝানো সম্ভব হবে না। সিনেমার নাম “হেমলক
সোসাইটি”, নায়িকা কয়েল মল্লিক নায়ককে “ আই লাভ ইউ” বলাতে নায়ক পরমব্রত উত্তরে
“গাঁ_ মেরেছে” শুনতে পাওয়া যায় এবং দর্শক আসন থেকে তা শুনে হাসির রোল ওঠে। আরও
প্রচুর সিনেমাতে এই রকম ভাষা পাওয়া যায়, ২২শে শ্রাবন, খাদ, ইতাদি।
আসলে বই এর
ভাষা এবং আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার ভাষা সম্পূর্ণ আলাদা। বন্ধুদের সঙ্গে কথা
বলার ভাষা ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমাতে স্থান পাচ্ছে এবং সেই ভাষাকে স্থান দেওয়াকে
অনেকে নির্দেশকের সাহসিকতা বলছেন। নির্দেশকেরা এর জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন। ২০১৪ তে চৌমাহা
গ্রামে সেই সাহসিকতা দেখিয়েছেন লোক সাভার সদস্য শ্রী তাপস পাল, উনি অনেক কিছু
বলেছেন, যা এখানে লেখা সম্ভব নয়, স্ক্রীন টেস্টে ওইরকম দেখলে তরুন মজুমদার ওনাকে
“দাদার কীর্তি” সিনেমাতে নিতেন কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু একটা লাইন না লিখলে নয়, “আমি
চন্দননগরের মাল...”, এই “মাল” শব্দটির মানে আভিধানে পাওয়া যাবে না কিন্তু এর মানে
প্রচলিত ভাষায়ে আনেক, যেমন জিনিস, মদ, পুরুষেরা সুন্দরী মহিলাকেও ওই বলে এবং
মহিলারা ওই শব্দটি কোন অপদার্থ পুরুষকে বলে। ইদানিং কালে আমরা প্রচুর বাংলা নতুন
শব্দ পেয়েছি যা অভিধানে নেই বা অন্য মানে আছে কিন্তু এদের সকলের প্রচলিত মানে
আমাদের জানা যেমন, চাপ, বাঁশ, হুড়কো, সেন্টি, ঝাকাস, চুদুরবুদুর, ইত্যাদি।
বইয়ের
ভাষায়ে পরিবর্তন আমরা পড়েছি এবং মেনে নিয়েছি, সিনেমার ভাষার পরিবর্তন আমরা ইদানিং
কালে দেখছি এবং ধীরে ধীরে মেনে নিতে শুরু করেছি কিন্তু যত গণ্ডগোল রাজনীতিবিদদের
ভাষা নিয়ে, কেন? তারাও কেন এই ভাষার পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের ভাষার পরিবর্তন করতে
পারবেন না? আনিল বসু, জ্যতিপ্রিয় মল্লিক, আনুব্রত মণ্ডল, আরাবুল ইসলাম, মনিরুল,
তাপস পাল, মমতা ব্যানারজির মতন রাজনীতিবিদরা রাজনীতিবিদদের ভাষায় যে পরিবর্তন
এনেছেন তা আমরা কিন্তু মেনে নিতে পারছি না। আসলে আমরা যতই রাজনীতিবিদদের আপছন্দ
করি দেখাই, আমরা কিন্তু তাদের এখনো মনে মনে উচ্চাসনে রেখেছি। তাদেরকে এখনো আমরা
সমাজের পথ প্রদর্শক মনে করি তাই আমরা রাজনীতিবিদদের ভাষার পরিবর্তন চাই না। আশাকরি
রাজনীতিবিদরা সাধারন মানুষের তাদের প্রতি সন্মানের কথা মাথায় রেখে এই পরিবর্তন
থেকে বিরত থাকবেন।
Good read. Very true. The rich language molested by present day unqualified goons of commies and Didi's associates.
ReplyDelete